আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি
মার্কিন নির্বাচন
পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। ইলেকটোরাল পদ্ধতির মাধ্যমে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকে। নির্বাচনের এ প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘ ও
জটিল। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ভোট পর্যন্ত
চলে বিতর্ক, জনমত জরিপ আর বিশ্লেষণ।
ভোট কেন নভেম্বরের মঙ্গলবারেই হয় ?
বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের ভোট দেওয়ার হার সবচেয়ে কম। ব্যস্ততার কারণে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যান না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুরুর দিকে ছুটির দিনে নির্বাচনের আয়োজন করে এলেও কোনো ভালো ফল মেলেনি। এরপর ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন নির্দিষ্ট করা হয়। ওই নিয়ম চালুর সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে কাছের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনেক সময় লেগে যেত কৃষকদের। শনিবার ছিল ফসলের মাঠে কাজের দিন। ধর্মকর্মের কারণে রবিবারও দূরে যাওয়া যেত না। আর বুধবার ছিল বাজারের দিন। মাঝখানে বাকি রইল মঙ্গলবার। এ কারণেই মঙ্গলবারকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আর মাস হিসেবে নভেম্বরকে বেছে নেওয়ার কারণ সে সময় নভেম্বর মাস পড়তে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে ফসল কাটা শেষ হয়ে যেত। নভেম্বর শেষ হতেই শীত নামত জাঁকিয়ে। তাই তো নভেম্বরকে ভোটের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
ইলেকটোরাল ভোট পদ্ধতি
বর্তমান বিশ্বের যেসব দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে তার মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এই নির্বাচন ব্যবস্থা জটিল। প্রতি চার বছর পর পর এই নির্বাচনে দেশটির প্রধান দুই দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া ককাসে ভোটের মাধ্যমে শুরু হয় নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। এর পরই হয়েছে নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি নির্বাচন। এভাবে সব প্রাইমারি ও ককাস মিলে যেসব ডেলিগেটস নির্বাচিত হন তারা দলীয় কাউন্সিলে প্রেসিডেন্ট পদে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করেন।
চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করার পর প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা প্রার্থী মনোনয়নে সম্মেলনের আয়োজন করেন। এরপর ১৮ জুলাই থেকে আলাদাভাবে দলীয় সমর্থকদের সম্মেলন হয়। চার দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রশংসা করে প্রার্থীকে বরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামক পদ্ধতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এ পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক কোনো কাঠামোও নেই। দেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রায় দুই বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পিতারা এই পদ্ধতিকে সংবিধানে জায়গা দেন। এই ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজনকে বেছে নেওয়ার জন্য ‘ইলেকটর’ বা নির্বাচক মনোনয়নের প্রক্রিয়া। ‘ইলেকটর’ নামে মনোনীত নির্বাচকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন আইন পরিষদ কংগ্রেস।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রাজ্যের প্রেরিত প্রত্যেক প্রতিনিধির বিপরীতে একজন করে ইলেকটর মনোনীত হন। মার্কিন কংগ্রেসে কোনো রাজ্যে থাকা প্রতিনিধির অনুপাতে নির্ধারিত হয় ওই রাজ্যের ইলেকটরের সংখ্যা। এ ছাড়া প্রত্যেক সিনেট সদস্যের বিপরীতেও একজন করে ইলেকটর মনোনীত হয়ে থাকেন। অবশ্য মার্কিন সিনেটে প্রত্যেক রাজ্যে দুটি সিনেট সদস্য পদ সংরক্ষিত থাকে। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নেওয়া হয় না। মার্কিন সংবিধানের ২৩তম সংশোধনী ধারায় বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য ছাড়াও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার জন্য অতিরিক্তি ৩ জন ইলেকটর নিয়োগ করা যাবে। এই পদ্ধতির স্বার্থেই নির্বাচনের সময় ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়াকেও আলাদা রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেদের বা তার দলের পছন্দ অনুযায়ী ইলেকটরের মনোনয়ন দিতে পারবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোই মূলত এই ইলেকটরে মনোনয়ন দিয়ে থাকলেও একজন ব্যক্তির ইলেকটর হিসেবে মনোনয়ন লাভের ক্ষেত্রে কিছু ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কে প্রত্যেক রাজ্যেরই নিজস্ব কিছু পালনীয় কর্তব্য রয়েছে।
একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেকটোরাল প্রতিনিধিকেও ভোট দিতে পারেন। মূলত ভোটাররা ইলেকটর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। কারণ কাগজে-কলমে ইলেকটরদের ভোটেই নির্বাচিত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট। বেশির ভাগ রাজ্যেই ‘জয়ী প্রার্থী সব পাবে’ এই নীতিতে ওই রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বণ্টিত হয়। অর্থাৎ একটি রাজ্যে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত রাজনৈতিক দলই ওই রাজ্যের বরাদ্দ করা সব ইলেকটোরাল ভোট লাভ করবে। তবে মূল রাজ্যে এর কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। মেইন ও নেব্রাস্কা রাজ্যে বরাদ্দকৃত ইলেকটোরাল ভোট ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতি অনুযায়ী ভাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজ্যে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত রাজনৈতিক দল পায় দুটি ইলেকটর ভোট আবার প্রত্যেক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী রাজনৈতিক দল পায় একটি করে ইলেক্টর ভোট। ভোট শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক রাজ্যের গভর্নর ‘সার্টিফিকেট অব অ্যাসারটেইনমেন্ট’ বা নির্বাচক নির্ধারণের সনদ প্রস্তুত করেন। এতে প্রার্থীর নাম এবং তাদের প্রতিনিধি ইলেকটরদের নাম এমনকি রাজ্যের প্রার্থীদের ভোটের তালিকাও থাকে।
এই সনদ কংগ্রেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল আরকাইভসে’ প্রেরণ করা হয়। এরপর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে ডিসেম্বরে ইলেকটররা নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে আলাদা আলাদা ব্যালটে ভোট দেন। এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেসে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আরকাইভ বা জাতীয় মহাফেজখানায় পাঠানো হয়। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে এই ইলেকটোরাল ভোট গণনা শেষে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এরপর সিনেটের সভাপতি চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেন। জানুয়ারির ২০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
যেভাবে চলছে প্রচারণা
সাধারণত তিনটি ধাপে প্রচারণা চালানো হয়। ‘গ্রাসরুট’, ‘অন দ্য গ্রাউন্ড’ এবং ‘ইন দি এয়ার’। গ্রাসরুট হলো, যে প্রচারণা এরই মধ্যে চালানো হয়েছে তার অর্জন। অন দ্য গ্রাউন্ড হলো, দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা। আর ইন দি এয়ার হলো সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়া। মার্কিন নির্বাচনে টেলিভিশনগুলোতে প্রার্থীরা প্রচারণা বিজ্ঞাপন দেন। সেসব বিজ্ঞাপনে প্রার্থীরা নিজেদের ভালো দিকের চেয়ে একে অপরের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেন ভোটারদের সামনে। এক অর্থে প্রার্থীরা প্রচারণা করেন ভোটারদের একেবারে অন্দরমহলে ঢুকে। নির্বাচনে যে কোনো প্রার্থীর প্রচারে যে কেউ নাম গোপন রেখে টাকা দিতে পারেন। প্রচারণা বাড়াতে এবারের প্রার্থীরা টাকা দিয়ে টিভিতে চাঙ্ক কিনছেন। দেশটির প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন চলে। এবার ট্রাম্প নারীদের নিয়ে যা বলেছেন, তার ক্লিপ পরিবারের সবার সঙ্গে বসে শিশুরাও দেখছে; আর হিলারি ক্লিনটন এতে খুবই বিপন্ন বোধ করছেন এমন একটা বিজ্ঞাপন হরহামেশা প্রচার করছে চ্যানেলগুলো। ট্রাম্পও তার বক্তব্য প্রচারে এমন বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিচ্ছেন।

প্রতীক কাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান দলের প্রতীক গাধা ও হাতি। ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী প্রতীক গাধা আর রিপাবলিকান দলের নির্বাচনী প্রতীক হাতি। বরাবরের মতো এবারও এই দুই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন হিলারি ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাধা ও হাতি শব্দগুলো শতাব্দী প্রাচীন।
সম্ভবত, ১৮০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক কার্টুন নিয়ে লোকজন খুব চুলচেরা বিশ্লেষণ করত। এসব কার্টুন ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় অর্থেই ব্যবহার হতো। যেমন— গাধা হতে পারে কষ্ট সহিষ্ণুতার প্রতীক, আবার একে হাস্যরস বা বোকার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। তেমনি হাতি হতে পারে মহান কিছু, আবার হতে পারে বোকা বা খারাপ কিছুর প্রতীক। প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রু জ্যাকসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট (১৮২৯-১৮৩৭)। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে গাধা বলে ডাকত। জ্যাকসন নামটি পছন্দ করেন এবং গাধাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। একই সময়ে একজন কার্টুনিস্ট হাতিকে রিপাবলিকানদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী প্রতীক গাধা আর রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রতীক হাতি।
নির্বাচনী প্রচারণায় কার কত খরচ
নির্বাচনী প্রচারণার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা একদিনেই পাড়ি দিচ্ছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ডিজিটাল ও সনাতনী উভয় পদ্ধতিতে চলছে প্রচারণা। এ জন্য অর্থ ব্যয়ের হিসাব শুনলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আসছে কোথা থেকে?
মার্কিন নিয়ম অনুসারে প্রচারণা ব্যয় মেটানোর জন্য প্রার্থীরা তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেসব দাতাদের নামসহ বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করে ফেডারেল ইলেকশন কমিটিকে জানাতে হয়। দলীয় সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা এই তহবিলের দাতা হন। অনেকে বিশেষ ভোজের আয়োজন করে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রাহকরাও খাবারের জন্য উচ্চমূল্য পরিশোধ করেন।
এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের তহবিল ১৩ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৭ ডলার অতিক্রম করেছে। তার অর্থদাতাদের মধ্যে বেশির ভাগই আইনজীবী ও বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। ডেমোক্রেটিক পার্টির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সের মতে, হিলারির বিরাট আকারের এই তহবিলের জন্য রাজনীতিতে ওয়াল স্ট্রিটের প্রভাব ছিল। বার্নি স্যান্ডার্সের তহবিলে বর্তমানে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ৪২৩ ডলার আছে। এখানে বেশির ভাগই এসেছে সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে। স্যান্ডার্সের একেকটি চাঁদার পরিমাণ ২০০ ডলারেরও কম।
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৩১৯ ডলার। এই ধনকুবেরের তহবিলের বেশির ভাগই নিজস্ব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ। অবশ্য তহবিল থেকেই পরে শোধ করতে হবে। রিপাবলিকানদের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী টেড ক্রুজের নির্বাচনী তহবিল ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০৬ ডলারেরও বেশি। টেড ক্রুজের বেশির ভাগ অনুদানই এসেছে নিজের অঙ্গরাজ্য থেকে। বিশেষ করে টেক্সাসের তেল, গ্যাস আর খামারবাড়ি থেকেই বেশির ভাগ অনুদান পেয়েছেন তিনি।

শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা
মার্কিন সংবিধানের ২০তম সংশোধনী মোতাবেক ২০ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের মেয়াদ থাকে এবং ওইদিন বেলা ১২টার আগেই নতুন প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনের শপথ নিতে হয়। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় বর্ণিত ৩৫ শব্দের লিখিত শপথ বাণী পাঠ করে প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়ে থাকেন। যদিও প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকেই শপথ গ্রহণের শেষ বাক্য হিসেবে ‘সো, গড হেল্প মি’ বলে শপথ শেষ করার একটি ঐতিহ্য চলে এসেছে, কিন্তু সম্প্রতি লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ভারমন্টে অবস্থিত প্রথম প্রেসিডেন্টের বাড়ি এবং সিনেটের সব ঐতিহাসিক দলিল ঘেঁটেও তারা এই দাবির পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ খুঁজে পাননি। এদিকে ২০ জানুয়ারি রবিবার হলে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি সোমবার নেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট নিজের থাকার স্থান পছন্দমাফিক সাজিয়ে নিতে পারবেন। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নিজের পছন্দমতো রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। নতুন প্রেসিডেন্টের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রস্তাবে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন থাকতে হবে।
আরো তথ্যঃ
http://archive1.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2016/11/17/156677.html
ভোট কেন নভেম্বরের মঙ্গলবারেই হয় ?
বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের ভোট দেওয়ার হার সবচেয়ে কম। ব্যস্ততার কারণে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যান না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুরুর দিকে ছুটির দিনে নির্বাচনের আয়োজন করে এলেও কোনো ভালো ফল মেলেনি। এরপর ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন নির্দিষ্ট করা হয়। ওই নিয়ম চালুর সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে কাছের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনেক সময় লেগে যেত কৃষকদের। শনিবার ছিল ফসলের মাঠে কাজের দিন। ধর্মকর্মের কারণে রবিবারও দূরে যাওয়া যেত না। আর বুধবার ছিল বাজারের দিন। মাঝখানে বাকি রইল মঙ্গলবার। এ কারণেই মঙ্গলবারকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আর মাস হিসেবে নভেম্বরকে বেছে নেওয়ার কারণ সে সময় নভেম্বর মাস পড়তে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে ফসল কাটা শেষ হয়ে যেত। নভেম্বর শেষ হতেই শীত নামত জাঁকিয়ে। তাই তো নভেম্বরকে ভোটের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
ইলেকটোরাল ভোট পদ্ধতি
বর্তমান বিশ্বের যেসব দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের চর্চা রয়েছে তার মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এই নির্বাচন ব্যবস্থা জটিল। প্রতি চার বছর পর পর এই নির্বাচনে দেশটির প্রধান দুই দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া ককাসে ভোটের মাধ্যমে শুরু হয় নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। এর পরই হয়েছে নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি নির্বাচন। এভাবে সব প্রাইমারি ও ককাস মিলে যেসব ডেলিগেটস নির্বাচিত হন তারা দলীয় কাউন্সিলে প্রেসিডেন্ট পদে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করেন।
চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করার পর প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা প্রার্থী মনোনয়নে সম্মেলনের আয়োজন করেন। এরপর ১৮ জুলাই থেকে আলাদাভাবে দলীয় সমর্থকদের সম্মেলন হয়। চার দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রশংসা করে প্রার্থীকে বরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামক পদ্ধতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এ পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক কোনো কাঠামোও নেই। দেশের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রায় দুই বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পিতারা এই পদ্ধতিকে সংবিধানে জায়গা দেন। এই ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজনকে বেছে নেওয়ার জন্য ‘ইলেকটর’ বা নির্বাচক মনোনয়নের প্রক্রিয়া। ‘ইলেকটর’ নামে মনোনীত নির্বাচকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে মার্কিন আইন পরিষদ কংগ্রেস।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে রাজ্যের প্রেরিত প্রত্যেক প্রতিনিধির বিপরীতে একজন করে ইলেকটর মনোনীত হন। মার্কিন কংগ্রেসে কোনো রাজ্যে থাকা প্রতিনিধির অনুপাতে নির্ধারিত হয় ওই রাজ্যের ইলেকটরের সংখ্যা। এ ছাড়া প্রত্যেক সিনেট সদস্যের বিপরীতেও একজন করে ইলেকটর মনোনীত হয়ে থাকেন। অবশ্য মার্কিন সিনেটে প্রত্যেক রাজ্যে দুটি সিনেট সদস্য পদ সংরক্ষিত থাকে। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নেওয়া হয় না। মার্কিন সংবিধানের ২৩তম সংশোধনী ধারায় বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য ছাড়াও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার জন্য অতিরিক্তি ৩ জন ইলেকটর নিয়োগ করা যাবে। এই পদ্ধতির স্বার্থেই নির্বাচনের সময় ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়াকেও আলাদা রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেদের বা তার দলের পছন্দ অনুযায়ী ইলেকটরের মনোনয়ন দিতে পারবেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোই মূলত এই ইলেকটরে মনোনয়ন দিয়ে থাকলেও একজন ব্যক্তির ইলেকটর হিসেবে মনোনয়ন লাভের ক্ষেত্রে কিছু ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পর্কে প্রত্যেক রাজ্যেরই নিজস্ব কিছু পালনীয় কর্তব্য রয়েছে।
একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেকটোরাল প্রতিনিধিকেও ভোট দিতে পারেন। মূলত ভোটাররা ইলেকটর নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। কারণ কাগজে-কলমে ইলেকটরদের ভোটেই নির্বাচিত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট। বেশির ভাগ রাজ্যেই ‘জয়ী প্রার্থী সব পাবে’ এই নীতিতে ওই রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট বণ্টিত হয়। অর্থাৎ একটি রাজ্যে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত রাজনৈতিক দলই ওই রাজ্যের বরাদ্দ করা সব ইলেকটোরাল ভোট লাভ করবে। তবে মূল রাজ্যে এর কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। মেইন ও নেব্রাস্কা রাজ্যে বরাদ্দকৃত ইলেকটোরাল ভোট ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতি অনুযায়ী ভাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজ্যে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত রাজনৈতিক দল পায় দুটি ইলেকটর ভোট আবার প্রত্যেক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী রাজনৈতিক দল পায় একটি করে ইলেক্টর ভোট। ভোট শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক রাজ্যের গভর্নর ‘সার্টিফিকেট অব অ্যাসারটেইনমেন্ট’ বা নির্বাচক নির্ধারণের সনদ প্রস্তুত করেন। এতে প্রার্থীর নাম এবং তাদের প্রতিনিধি ইলেকটরদের নাম এমনকি রাজ্যের প্রার্থীদের ভোটের তালিকাও থাকে।
এই সনদ কংগ্রেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল আরকাইভসে’ প্রেরণ করা হয়। এরপর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে ডিসেম্বরে ইলেকটররা নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে আলাদা আলাদা ব্যালটে ভোট দেন। এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেসে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আরকাইভ বা জাতীয় মহাফেজখানায় পাঠানো হয়। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে এই ইলেকটোরাল ভোট গণনা শেষে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এরপর সিনেটের সভাপতি চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করেন। জানুয়ারির ২০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।
যেভাবে চলছে প্রচারণা
সাধারণত তিনটি ধাপে প্রচারণা চালানো হয়। ‘গ্রাসরুট’, ‘অন দ্য গ্রাউন্ড’ এবং ‘ইন দি এয়ার’। গ্রাসরুট হলো, যে প্রচারণা এরই মধ্যে চালানো হয়েছে তার অর্জন। অন দ্য গ্রাউন্ড হলো, দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা। আর ইন দি এয়ার হলো সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়া। মার্কিন নির্বাচনে টেলিভিশনগুলোতে প্রার্থীরা প্রচারণা বিজ্ঞাপন দেন। সেসব বিজ্ঞাপনে প্রার্থীরা নিজেদের ভালো দিকের চেয়ে একে অপরের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেন ভোটারদের সামনে। এক অর্থে প্রার্থীরা প্রচারণা করেন ভোটারদের একেবারে অন্দরমহলে ঢুকে। নির্বাচনে যে কোনো প্রার্থীর প্রচারে যে কেউ নাম গোপন রেখে টাকা দিতে পারেন। প্রচারণা বাড়াতে এবারের প্রার্থীরা টাকা দিয়ে টিভিতে চাঙ্ক কিনছেন। দেশটির প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন চলে। এবার ট্রাম্প নারীদের নিয়ে যা বলেছেন, তার ক্লিপ পরিবারের সবার সঙ্গে বসে শিশুরাও দেখছে; আর হিলারি ক্লিনটন এতে খুবই বিপন্ন বোধ করছেন এমন একটা বিজ্ঞাপন হরহামেশা প্রচার করছে চ্যানেলগুলো। ট্রাম্পও তার বক্তব্য প্রচারে এমন বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিচ্ছেন।
প্রতীক কাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রধান দলের প্রতীক গাধা ও হাতি। ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী প্রতীক গাধা আর রিপাবলিকান দলের নির্বাচনী প্রতীক হাতি। বরাবরের মতো এবারও এই দুই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন হিলারি ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাধা ও হাতি শব্দগুলো শতাব্দী প্রাচীন।
সম্ভবত, ১৮০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক কার্টুন নিয়ে লোকজন খুব চুলচেরা বিশ্লেষণ করত। এসব কার্টুন ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় অর্থেই ব্যবহার হতো। যেমন— গাধা হতে পারে কষ্ট সহিষ্ণুতার প্রতীক, আবার একে হাস্যরস বা বোকার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। তেমনি হাতি হতে পারে মহান কিছু, আবার হতে পারে বোকা বা খারাপ কিছুর প্রতীক। প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রু জ্যাকসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট (১৮২৯-১৮৩৭)। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে গাধা বলে ডাকত। জ্যাকসন নামটি পছন্দ করেন এবং গাধাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নেন। একই সময়ে একজন কার্টুনিস্ট হাতিকে রিপাবলিকানদের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী প্রতীক গাধা আর রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রতীক হাতি।
নির্বাচনী প্রচারণায় কার কত খরচ
নির্বাচনী প্রচারণার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা একদিনেই পাড়ি দিচ্ছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। ডিজিটাল ও সনাতনী উভয় পদ্ধতিতে চলছে প্রচারণা। এ জন্য অর্থ ব্যয়ের হিসাব শুনলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। প্রশ্ন উঠতে পারে, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আসছে কোথা থেকে?
মার্কিন নিয়ম অনুসারে প্রচারণা ব্যয় মেটানোর জন্য প্রার্থীরা তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন। তবে সেসব দাতাদের নামসহ বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করে ফেডারেল ইলেকশন কমিটিকে জানাতে হয়। দলীয় সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা এই তহবিলের দাতা হন। অনেকে বিশেষ ভোজের আয়োজন করে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রাহকরাও খাবারের জন্য উচ্চমূল্য পরিশোধ করেন।
এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের তহবিল ১৩ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৭ ডলার অতিক্রম করেছে। তার অর্থদাতাদের মধ্যে বেশির ভাগই আইনজীবী ও বিভিন্ন আইনি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। ডেমোক্রেটিক পার্টির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্সের মতে, হিলারির বিরাট আকারের এই তহবিলের জন্য রাজনীতিতে ওয়াল স্ট্রিটের প্রভাব ছিল। বার্নি স্যান্ডার্সের তহবিলে বর্তমানে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ৪২৩ ডলার আছে। এখানে বেশির ভাগই এসেছে সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে। স্যান্ডার্সের একেকটি চাঁদার পরিমাণ ২০০ ডলারেরও কম।
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৩১৯ ডলার। এই ধনকুবেরের তহবিলের বেশির ভাগই নিজস্ব এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ। অবশ্য তহবিল থেকেই পরে শোধ করতে হবে। রিপাবলিকানদের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী টেড ক্রুজের নির্বাচনী তহবিল ৫ কোটি ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৫০৬ ডলারেরও বেশি। টেড ক্রুজের বেশির ভাগ অনুদানই এসেছে নিজের অঙ্গরাজ্য থেকে। বিশেষ করে টেক্সাসের তেল, গ্যাস আর খামারবাড়ি থেকেই বেশির ভাগ অনুদান পেয়েছেন তিনি।
শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা
মার্কিন সংবিধানের ২০তম সংশোধনী মোতাবেক ২০ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের মেয়াদ থাকে এবং ওইদিন বেলা ১২টার আগেই নতুন প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনের শপথ নিতে হয়। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় বর্ণিত ৩৫ শব্দের লিখিত শপথ বাণী পাঠ করে প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়ে থাকেন। যদিও প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকেই শপথ গ্রহণের শেষ বাক্য হিসেবে ‘সো, গড হেল্প মি’ বলে শপথ শেষ করার একটি ঐতিহ্য চলে এসেছে, কিন্তু সম্প্রতি লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ভারমন্টে অবস্থিত প্রথম প্রেসিডেন্টের বাড়ি এবং সিনেটের সব ঐতিহাসিক দলিল ঘেঁটেও তারা এই দাবির পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ খুঁজে পাননি। এদিকে ২০ জানুয়ারি রবিবার হলে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ পিছিয়ে ২১ জানুয়ারি সোমবার নেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট নিজের থাকার স্থান পছন্দমাফিক সাজিয়ে নিতে পারবেন। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নিজের পছন্দমতো রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না। নতুন প্রেসিডেন্টের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রস্তাবে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন থাকতে হবে।
আরো তথ্যঃ
http://archive1.ittefaq.com.bd/print-edition/sub-editorial/2016/11/17/156677.html
No comments