বাগধারা
ক) যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল— এ বাক্যটি শোনেননি এমন কেউ কি আছেন?
মনে হয় না। কিন্তু এর শানে-নজুল কী? বুনো ওল ও বাঘা তেঁতুলের মধ্যে
সম্পর্ক কী?
কী জানি কী জানি। ছোটোবেলায় তো বেশ শুনেছিলাম। পত্রিকা খুললেও দেখা যায়— যেমন বুনো ওল শেন ওয়ার্নের বোলিং তেমনি বাঘা তেঁতুল টেন্ডুলকর।
ওলকচু খেলে গলা চুলকায়, বিশেষ করে বুনো ওলকচু খেলে তো কথা নেই। একেবারে কম্ম কাবার। তো তখন কী করা? আর রান্না করা তরকারি চুলকাবেই বা কেন?
ওলকচুতে থাকে ক্ষারজাতীয় পদার্থ, যার নাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা ক্যালসিয়াম অক্সালেট। এই ক্ষারধর্মী পদার্থটি থাকে কেলাস আকারে।
—কেলাস আকার বুঝি না।
—আচ্ছা কেলাসের ইংরেজি নাম হল ক্রিস্টাল (Crystal)।
—তাও বুঝি না।
—আচ্ছা। কেলাসের আকৃতি হল—চিনির মিছরি, ফিটকিরি, বা তুঁতে দেখেছেন? একটি চিনির মিছরিকে শক্ত কিছু দিয়ে বাড়ি দিন। দেখা গেল এটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। কোনোটা দেখতে চৌকো, কোনোটা পিরামিডের মতো, আবার কোনোটা সুচের মতো দানা বাঁধা। এগুলো এত ছোটো অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা সম্ভব নয়।
এখন ওলকচুর তরকারি খাওয়ার পর গলায় এই সুচের মতো ক্ষার আটকে থেকে বিষম চুলকোতে থাকে। কী করা যায়, কী করা যায়? ও শাবানা, ও ববিতা এখন কী উপায়?
কী আর উপায়! ক্ষারকে প্রশমিত করতে পারে অ্যাসিড। অ্যাসিড খেতে হবে। সর্বনাশ, বাজারের কোনো অ্যাসিড নয়। খাবারে অনেক অ্যাসিড থাকে। যেমন তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড, লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। গ্রামে-গঞ্জে সহজলভ্য হচ্ছে তেঁতুল। সুতরাং তেঁতুল খাও। অ্যাসিড-ক্ষারের বিক্রিয়ায় অবস্থা প্রশমিত হয়ে এলেই গলার কুটকুট চুলকোনি কমে যাবে।
খেতে হবে কেন? আমাদের শরীরে না অ্যাসিড থাকে? সে তো থাকে, তবে তা থাকে পাকস্থলীতে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। মুখের লালাতে টায়ালিন নামক এনজাইম থাকে। কিন্তু সে তো অ্যাসিড নয়, তাই বারবার লালা দিয়ে গলা ভেজালে লাভ নেই, বরং সুচাকৃতির কেলাসের সঙ্গে ঘষা লেগে কুটকুট আরও বেড়ে যাবে।
এই হচ্ছে কাহিনি। এখান থেকেই এসেছে—যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল। যেমন বুনো ওল ড্রাইভাররা তেমনি বাঘা তেঁতুল স্কুলের ছাত্ররা।
খ) কলুর বলদ। এটি একটি বাগধারা। এর অর্থ একটানা খাটুনি। 'কলুর বলদ' সমাসবদ্ধ পদ, অসংলগ্ন সমাস বলে একসাথে সেঁটে বসে না। অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
কিন্তু মানে কী?
কামার, কুমারের মতো কলুও সমাজের একটি শ্রেণিবিশেষ। গ্রামাঞ্চলে যাঁরা তেলের ব্যবসা করেন তাঁদের কলু বলা হয়। এঁরা সাধারণত বলদ দ্বারা একটানা ঘানি টানিয়ে সরিষা, তিল-তিসি থেকে তৈল তৈরি করেন। বলদ একটা খুঁটির চারদিকে একটানা ঘানি টানে।
এখান থেকেই বাগধারাটি এসেছে। সমাজে যাঁরা বিনা প্রতিবাদে পরের নির্দেশে অন্ধের ন্যায় পরিশ্রম করেন তাঁদের কলুর বলদ বলা হয়।
'চিনির বলদ' আবার ভিন্ন ব্যাপার। কিছুটা মিল আছে, আবার বাড়তি অর্থও আছে। চিনির বলদ মানে ভারবাহী, সাথে ফল লাভের অংশীদারও নয়।
প্রতিটি বাগধারা গড়ে ওঠার পেছনে সূত্র থাকে লোকসমাজের কোনো ঘটনার। আগে আখ মাড়াই করতে বলদের প্রয়োজন হত। আখ থেকেই তৈরি হয় চিনি, যা সকল প্রকার মিষ্টান্ন তৈরির অন্যতম মূল উপাদান। কিন্তু বলদ সেটির কোনো ভাগ পায় না। অবশ্যই এটি একটি রূপকধর্মী বিষয়। বাক্যে প্রয়োগ: চিনির বলদের মতো এ সংসারে শুধু খেটেই গেলাম।
গ) গড্ডলিকা প্রবাহ। গড্ডল মানে ভেড়া। ভেড়া সাধারণত একটির পেছনে আরেকটি— সুশৃঙ্খলভাবে এক লাইনে চলে। অন্ধ অনুকরণ বোঝাতে গড্ডলিকা প্রবাহ বাগধারাটি ব্যবহৃত হয়। ছবিতেই দেখুন না।
গড্ডালিকা প্রবাহ লেখা ভুল।
কী জানি কী জানি। ছোটোবেলায় তো বেশ শুনেছিলাম। পত্রিকা খুললেও দেখা যায়— যেমন বুনো ওল শেন ওয়ার্নের বোলিং তেমনি বাঘা তেঁতুল টেন্ডুলকর।
ওলকচু খেলে গলা চুলকায়, বিশেষ করে বুনো ওলকচু খেলে তো কথা নেই। একেবারে কম্ম কাবার। তো তখন কী করা? আর রান্না করা তরকারি চুলকাবেই বা কেন?
ওলকচুতে থাকে ক্ষারজাতীয় পদার্থ, যার নাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা ক্যালসিয়াম অক্সালেট। এই ক্ষারধর্মী পদার্থটি থাকে কেলাস আকারে।
—কেলাস আকার বুঝি না।
—আচ্ছা কেলাসের ইংরেজি নাম হল ক্রিস্টাল (Crystal)।
—তাও বুঝি না।
—আচ্ছা। কেলাসের আকৃতি হল—চিনির মিছরি, ফিটকিরি, বা তুঁতে দেখেছেন? একটি চিনির মিছরিকে শক্ত কিছু দিয়ে বাড়ি দিন। দেখা গেল এটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। কোনোটা দেখতে চৌকো, কোনোটা পিরামিডের মতো, আবার কোনোটা সুচের মতো দানা বাঁধা। এগুলো এত ছোটো অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা সম্ভব নয়।
এখন ওলকচুর তরকারি খাওয়ার পর গলায় এই সুচের মতো ক্ষার আটকে থেকে বিষম চুলকোতে থাকে। কী করা যায়, কী করা যায়? ও শাবানা, ও ববিতা এখন কী উপায়?
কী আর উপায়! ক্ষারকে প্রশমিত করতে পারে অ্যাসিড। অ্যাসিড খেতে হবে। সর্বনাশ, বাজারের কোনো অ্যাসিড নয়। খাবারে অনেক অ্যাসিড থাকে। যেমন তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড, লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড। গ্রামে-গঞ্জে সহজলভ্য হচ্ছে তেঁতুল। সুতরাং তেঁতুল খাও। অ্যাসিড-ক্ষারের বিক্রিয়ায় অবস্থা প্রশমিত হয়ে এলেই গলার কুটকুট চুলকোনি কমে যাবে।
খেতে হবে কেন? আমাদের শরীরে না অ্যাসিড থাকে? সে তো থাকে, তবে তা থাকে পাকস্থলীতে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। মুখের লালাতে টায়ালিন নামক এনজাইম থাকে। কিন্তু সে তো অ্যাসিড নয়, তাই বারবার লালা দিয়ে গলা ভেজালে লাভ নেই, বরং সুচাকৃতির কেলাসের সঙ্গে ঘষা লেগে কুটকুট আরও বেড়ে যাবে।
এই হচ্ছে কাহিনি। এখান থেকেই এসেছে—যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেঁতুল। যেমন বুনো ওল ড্রাইভাররা তেমনি বাঘা তেঁতুল স্কুলের ছাত্ররা।
খ) কলুর বলদ। এটি একটি বাগধারা। এর অর্থ একটানা খাটুনি। 'কলুর বলদ' সমাসবদ্ধ পদ, অসংলগ্ন সমাস বলে একসাথে সেঁটে বসে না। অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
কিন্তু মানে কী?
কামার, কুমারের মতো কলুও সমাজের একটি শ্রেণিবিশেষ। গ্রামাঞ্চলে যাঁরা তেলের ব্যবসা করেন তাঁদের কলু বলা হয়। এঁরা সাধারণত বলদ দ্বারা একটানা ঘানি টানিয়ে সরিষা, তিল-তিসি থেকে তৈল তৈরি করেন। বলদ একটা খুঁটির চারদিকে একটানা ঘানি টানে।
এখান থেকেই বাগধারাটি এসেছে। সমাজে যাঁরা বিনা প্রতিবাদে পরের নির্দেশে অন্ধের ন্যায় পরিশ্রম করেন তাঁদের কলুর বলদ বলা হয়।
'চিনির বলদ' আবার ভিন্ন ব্যাপার। কিছুটা মিল আছে, আবার বাড়তি অর্থও আছে। চিনির বলদ মানে ভারবাহী, সাথে ফল লাভের অংশীদারও নয়।
প্রতিটি বাগধারা গড়ে ওঠার পেছনে সূত্র থাকে লোকসমাজের কোনো ঘটনার। আগে আখ মাড়াই করতে বলদের প্রয়োজন হত। আখ থেকেই তৈরি হয় চিনি, যা সকল প্রকার মিষ্টান্ন তৈরির অন্যতম মূল উপাদান। কিন্তু বলদ সেটির কোনো ভাগ পায় না। অবশ্যই এটি একটি রূপকধর্মী বিষয়। বাক্যে প্রয়োগ: চিনির বলদের মতো এ সংসারে শুধু খেটেই গেলাম।
গ) গড্ডলিকা প্রবাহ। গড্ডল মানে ভেড়া। ভেড়া সাধারণত একটির পেছনে আরেকটি— সুশৃঙ্খলভাবে এক লাইনে চলে। অন্ধ অনুকরণ বোঝাতে গড্ডলিকা প্রবাহ বাগধারাটি ব্যবহৃত হয়। ছবিতেই দেখুন না।
গড্ডালিকা প্রবাহ লেখা ভুল।

ReplyDeleteGreat post
Kontraktor Pameran
Vendor Booth Pameran
Kontraktor Booth Pameran
Jasa Pembuatan Booth
Jasa Dekorasi Booth Pameran